আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণ
আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণ সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? হয়তো আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণ সম্পর্কে অনেকে জায়গায় দেখে থাকবেন। কিন্তু এই নিবন্ধনটির আপনাদের কথা চিন্তা করে খুব সহজভাবে সকল বিষয়ে আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণসহ সকল কিছু আলোচনা করা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণ এর পাশাপাশি ভাষা সম্পর্কিত আরো বেশি তথ্য পেতে চান তাহলে এই নিবন্ধনটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণ
ইভিভিটিভি
আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণ
নিম্নে আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণসহ ভাষার খুঁটিনাটি সকল তথ্য তুলে ধরা হলো।
বাংলা ভাষা রীতি
বাংলা ভাষা রীতি জানা আমাদের খুবি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলের জনকণ নিজ নিজ অঞ্চলের ভাষায় কথা বলে। এগুলো আঞ্চলিক কথ্য রীতি। পৃথিবীর সব ভাষা রয়েছে আঞ্চলিক পদ্ধতিতে আছে। অঞ্চলের জনগণের মুখের ভাষার সঙ্গে আরেক অঞ্চলের জনগণের মুখের ভাষা যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। ফলে এমন হয় যে, এক অঞ্চলের ভাষা অন্য অঞ্চলের লোকের কাছে দুর্বুদ্ধ হয়ে ওঠে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণের কত ভাষা দিনাজপুর বা রংপুর লোকের পক্ষে খুব সহজবোধ নয়। এ ধরনের আঞ্চলিক ভাষাকে বলার ও লেখার ভাষা হিসেবে সর্বজনীন স্বীকৃতি দেওয়া সুবিধা জনক নয়। এ ধরনের আঞ্চলিক ভাষা কে বলার ও লেখার ভাষা হিসাবে সর্বজনীন স্বীকৃতি দেওয়া সুবিধা জনক নয়।
কারণ এতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাভাষীদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান অন্তরায় দেখা দিতে পারে। সে কারণে দেশের শিক্ষিত ও পন্ডিত সমাজে ব্যবহার করেন। বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষিত পারস্পরিক আলাপ আলোচনা ও ভাবের আদান প্রদান করে থাকেন। বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রেষ্ঠজনের ব্যবহৃত এই ভাষায় আদর্শ কথনীতি।
আর পড়ুনঃ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি কাগজ লাগে
বাংলা ইংরেজি আরবি হিন্দি প্রভৃতি ভাষার মৌখিক বা কথ্য এবং লৈখিক বা লেখ্য এই দুটি রীতি দেখা যায়। ভাষার মৌখিকৃতি আবার রয়েছে একাধিক রীতি : একটি আঞ্চলিক কথ্যরীতি অপরটি আদর্শ কথ্যরীতি।
আবার আঞ্চলিক কথ্যরীতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য কখনো কখনো এত ব্যাপক ও বিস্তার হয়, যে এক অঞ্চলের মানুষের কাছে অন্য অঞ্চলের ভাষা অত্যন্ত দুর্বুদ্ধ বলে মনে হয়। এই অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে ভাষা বিটকয়েন ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি সর্বজন গ্রহ ভাষা ব্যবহার করেন। পারস্পরিক ভাবে আদান-প্রদানের জন্য গড়ে তোলেন আদর্শ কথ্যরীতি।
ভাষার রীতি
এখন আমরা ভাষার রীতি স্মপর্কে জানবো। অধিকাংশ ভাষায় অত্যন্ত দুটি নীতি থাকে।
- কথ্য ভাষা রীতি
- লেখ্য ভাষা রীতি
বাংলা ভাষায় এইসব প্রকৃতির একাধিক বিভাজন রয়েছে। যেমন কথ্য ভাষা রীতির মধ্যে রয়েছে আদর্শ কথ্য রীতি ও আঞ্চলিক কথ্য রীতি। আবার লেখ্য ভাষারীতির মধ্যে রয়েছে প্রমিত রীত, সাধু রীতি ও কথ্য রীতি।
কথ্য ভাষা রীতি
কথ্য ভাষা রীতি ভাষার মূল রূপ। কথ্য ভাষা রীতিরর উপরে ভিত্তি করে লেখ্য ভাষা রীতির রূপ তৈরি হয়। স্থান ও কাল ভেদে ভাষার যে পরিবর্তন ঘটে তা মূলত কথ্য ভাষা রীতিতে পরিবর্তন। তাই কথ্য ভাষার পরিবর্তনের ফলে নতুন নতুন ভাষা ও উপভাষার জন্ম হয়।
আঞ্চলিক কথ্য রীতি
কথ্য রীতির আঞ্চলিক ভেদ সহজেই বোঝা যায়। এই আঞ্চলিক ভেদ সাধারণত অঞ্চলের নামে পরিচিত পায়। যেমন নোয়াখালীর ভাষা, চাপাই নবাবগঞ্জের ভাষা, তিনবার সুন্দরবন অঞ্চলের ভাষা। ভাষার এই আঞ্চলিকতা উপভাষা নামে আখ্যায়িত হয়ে থাকে।
বাঙালি (বাংলাদেশের মধ্যে ও দক্ষিণ অঞ্চল) , পূর্বি ( বাংলাদেশের পূর্ব অঞ্চল, ত্রিপুরা এবং আসামের বরাক অঞ্চল), বরেন্দ্রি ( বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চি অঞ্চল), কামরূপি ( বিহারের পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অঞ্চল এবং বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চল),রাঢ়ি ( পশ্চিমবঙ্গ), ঝাড়খন্ডি ( পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অঞ্চল ও ঝাড়খণ্ডের পূর্ব অঞ্চল) প্রভৃতি কয়েকটি উপভাষার নাম।
আঞ্চলিক কথ্য রীতির উদাহরণ
নিম্নে আঞ্চলিক কথ্য রীতির উদাহরণ - কোন এক লোকের দুইটি ছেলে ছিলো।
এ বাক্যের আঞ্চলিক কথ্য রীতি নিম্নরূপঃ
- নওগাঁ অঞ্চল - এটা মানুশের দুটা ছল আছল।
- রংপুর অঞ্চল - একজন মানশের দুইকনা ব্যাটা আছিন্।
- ময়মনসিং অঞ্চল - য়্যাক জনেক দুই পুৎ আছিল্।
- নোয়াখালী অঞ্চল - একজেনের দুই হুত আছিল।
- ঢাকা অঞ্চল - একজন মানশের দুইডা পোলা আছিল।
- মণিপুর (মায়াং) - মুনি আগোর পুতো দুগো আসিল।
- খুলনা ও যশোর অঞ্চল- অ্যাক জন মানশির দুটো ছাওয়াল ছিলো।
- কুমিল্লা অঞ্চল - একজন - একজন মান্শির দুটো ছাওয়াল ছিলো।
- চট্টগ্রাম অঞ্চল - এগুয়া মান্শির দুয়া পুয়া আছিলো।
- সিলেট অঞ্চল - এক মানুশের দুগুয়া পুয়া আছিলো ।
- চট্টগ্রাম (চাকমা) - এক জন তুব দিবা পোয়া এল্।
প্রমিত রীতি
বিশ শতকের সূচনায় কলকাতার শিক্ষিত লোকের তথ্য ভাষাকে লেখ্য রীতি আদর্শ হিসেবে চালু করার চেষ্টা হয়। তখন চলিত রীতি নামে পরিচিত পাই। এই রীতিতে ক্রিয়া, সর্বনাম, অনুসর্গ প্রভৃতি শ্রেণীর হয় এবং তৎসম শব্দের ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কমে। দিকে চলিত রীতিতে শুধু সাহিত্য রচিত হতো: দাপ্তরিক কাজে ও বিদ্যা চর্চা ইত্যাদি হতো সাধু ভাষায়।
বিশ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ চলিত রীতিতে সাধূ রীতর জায়গায় দখল করে। ক্রমে জীবনের সব ক্ষেত্রে সাধুরইটিকে সরিয়ে চলিত রীতি আদর্শ লেখ্য রীতিতে পরিণত হয়। ২১ শতকের সূচনা নাগাদ এই চলিতেই নতুন নাম হয় প্রমিত রীতি। এটি ’মান রীতি’ নামেও পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ, বিদ্যা চর্চা, ও যোগাযোগের ভাষা হিসাবে প্রমিত রীতি লেখ্য বাংলা ভাষায় প্রান রীতিতে পরিণত হয়।
প্রমিত রীতির সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য
নিম্ন লিখিত প্রমিত রীতির সাধারণ বেশিষ্ঠ্য তুলে ধরা হলোঃ
ক. প্রমিত রীতিতে ক্রিয়া, সর্বনাম ও অনুসর্গ হ্রস্বতর। ক্রিয়ার ক্ষেত্রে যেমন- ’করা’ ক্রিয়ার রূপ : করছে, করেছে, করল, করলে, করলাম, করত, করছিলাম, করব, করবে, করতে, করে , কারলে, করার।
সর্প নামের ক্ষেত্রে যেমন- তারা, এদের, যা, তা,ও,কেউ ইত্যাদি।
অনুসর্গের ক্ষেত্রে যেমন- থেকে, হতে, সঙ্গে ইত্যাদি।
খ. প্রমিত রীতিতে শব্দ ব্যবহার আলোচক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। প্রয়োজন অনুযায়ী সব ধরনের শব্দ ব্যবহার করা যায়। যেমন- তৎসম ’বৎসর’- ও লেখা যায় আবার তদ্ভব ‘বছর’ -ও ও লেখা যায়। এভাবেই ‘চন্দ্র’- ও লেখা যায়।
গ. প্রমিত রীতিতে কথ্য রীতিতে বহু শব্দ বর্জনীয়, যেমনঃ ‘ধুলো’ তুলো, মুলো, পুজো, সবচে, ইত্যাদি, না লিখে ‘ধূলো, তুলো, মুলা, পূজা, সবচেয়ে ইত্যাদি লিখতে হয়।
ঘ. প্রমিত রূীতি পরিবর্তনশীল।
ঙ. প্রমিত রূীতি সহজ,সরল ও সাবলীল ভাব প্রকাশ করে।
চ. প্রতিম রীতিতে তদ্ভদ, দেশি, বিদেশি, শব্দের ব্যবহার বেশি।
ছ. প্রতিত রীতিতে একই সঙ্গে মৌখিক ভাষা ও লৈখিক ভাষা।
জ. প্রমিত রীতি কৃত্রিমতা বর্জিত হয়।
ঝ. প্রমিত রীতিতে সন্ধি ও সমাজবদ্ধ পদ ভেঙ্গে ব্যবহার করা হয়।
ঞ. প্রমিম রীতিতে তদ্ভব অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়।
ট. প্রমিত রীতিতে অনুসর্গ সংক্ষিপ্তরূপে ব্যবহৃত হয়।
ঠ. প্রমিম রীতি নাটকের সংলাপ, বক্তৃতা ও কথোপকোথনের জন্য বেশি উপযোগি।
প্রমিত রীতির উদাহারণ
আপনি যদি প্রমিত ভাষার উদাহরণ খুঁজে থাকে তাহলে আপনি নিম্নলিখিত প্রমিত রীতির উদাহরণ গুলি দেখে নিতে পারেন।
১ . পুল পেরিয়া সমনে একটা বাঁশ বাগান পড়ল। তারি মধ্যে দিয়ে রাস্তা। মচমচ করে শুকনো বাঁশ পাতার রাশ ও বাঁশের খোসা জুতোর নিচে ভেঙ্গে যেতে লাগলো। পাশে একটা ফাঁকা জাগায় বুনো গাছপালা লতা ঝোপের ঘন সমাবেশ। সমস্ত ঝোপটার মাথা জুরে সাদা সাদা তুলোর মতো রাধালতার ফূল ফুটে রয়েছে।
২. এই পৃথিবীটা আমরা অনেক দিনকার এবং অন্ধকার ভালোবাসার লোকের মত আমার কাছে চিরকাল নতুন। আমাদের দুজনকার মধ্য খুবই গভীর এবং সুদূর ব্যাপী চেনাশোনা আছে। আমি বেশ মনে করতে পারি, বহু যুগ আগে যখন তরুণী পৃথিবী সমুদ্র স্নান থেকে সবে মাথা তুলে উঠে তখনকার নবীন সূর্যকে বন্দনা করেছেন তখন আমি এই পৃথিবীর নতুন মাটিতে কথা থেকে প্রথম জীবনোচ্ছাসে কাজ হয়ে পল্লবী তো হয়ে উঠেছিল।
৩. আজ ঘুম থেকে উঠে চোখ চেয়ে দেখি আকাশে আলো নেই। আকাশের চেহারা দেখে অর্থশক্তি লোক ঠিক বুঝতে পারে না যে সময়টা সকাল না সন্ধ্যা।
৪. শস্যহীন জনবহুল এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেরিয়ে পড়ার ব্যাকুলতা ধোঁয়াটে আকাশকে পর্যন্ত যেন সদা সন্ত্রস্ত করে রাখে। ঘরে কিছু নেই। ভাগাভাগি লুটলুটি আর স্থান বিশেষ খুনো খুনি করে সর্বচেষ্টার শেষ। দৃষ্টি বইয়ের পানে, মস্ত নদীটির ওপানরে, জেলার বাইরে - প্রদেশেরও; হয়তো বা আরো দূরে। যারা নীল বানিয়ে ভেশে পরে তাদের দৃষ্টি দিগন্তে আটকায় না । জ্বালাময়ী আশা; ঘরে হা -শূর্ণ মুখ থেবড়নো নিরাশা বলে তাতে মাত্রাতিরিক্ত প্রখারত। দূরে তাকিয়ে যাদের চোখে আশা জ্বলে তাদের আর তর সয় না, দিনমান ক্ষনের সবুর ফাঁসির শামিল। তাই তারা ছোট, ছোট।
৫. আকাশের রক্ত বুঝি বরাবর বদলায়। কখনো নীল, কখনো আবার টকটকে লাল, মাঝে মাঝে যখন সাদা কালো মেঘগুলো ইতিউতি ছড়িয়ে থাকে, আর সোনালী সূর্যের আভা ইঙ্গিত বাঁকা হয়ে স্রোত মেঘের পায়ে লুটিয়ে পড়ে তখন মনে হয়, এ রঙ একটি নয় অনেক। এখন আকাশের কোন রং নেই।
আরো পড়ুনঃ ড্রপ শিপিং বিজনেস করে ঘরে বসে আয় করুন
লেখকের মন্তব্য
আমরা এতক্ষন আলোচনা করলাম আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার উদাহরণ বা বাংলা ভাষা নিয়ে সকল তথ্য। এ বিষয়ে যদি আপনার কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন কারণ আমরা প্রত্যেকের কমেন্টের রিভিউ করি। আমাদের সঙ্গে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সুন্দর তথ্য