মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল

মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল এটিই জানা প্রত্যেকের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত যারা আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য জীবন দিয়েছে তাদের কথা স্মরণ করা। আর আমাদের যুদ্ধের সময় যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল তার ইতিহাস সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আজকের এই নিবন্ধনটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল তার বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল
মুক্তিযোদ্ধা কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল এবং সেক্টর কমান্ডারের নাম দায়িত্ব এবং এগারটি সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ও সেক্টর সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই নিবন্ধনটির মাধ্যমে।

সূচিপত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল

ইভিভিটিভি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল এ বিষয়ে জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। ১৯৭১ সালে এক রক্ত হয়ে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে তার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে বোধ বা চেতনা কে কেন্দ্র করে তার নাম মুক্তিযোদ্ধা চেতনা।

৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে যে স্বাধীনতা তাকে চিরমুন্নত রাখরতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের প্রেরণা জাগাবে চিরদিন। ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভ করলেও প্রকৃত মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির।

১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার উপর আঘাত ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট ৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ৬৬ সালের ৬ দফা ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেরসহ বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন।

সর্বোপরি উনশত্তর সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নিরকোষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়েমুখী শুরু করেন। তখনই স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়।

পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে বিরহ বাঙালির উপর আক্রমণ চালায়। হত্যা ধর্ষণ লুটপাট অগ্নিসংযোগ নানা ধরনের বর্বরতা চালায়। তখন বাংলার জনতা পাকিস্তানের আন্দোলন রুখে দেয়। দীর্ঘ নয় মাস ধরে যুদ্ধ চলে।

অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে বাংলাদেশের বিজয় লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রক্ত খেয়ে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের চেতনা। দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে এই চেতনা সুমন্নত রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।’


এজন্য আমাদের আরো জানা প্রয়োজন তাদের জন্য আমাদের এই দেশটি স্বাধীন হয়েছিল তাদের নাম এবং তাদের ইতিহাস সম্পর্কে। আমরা ধাপে ধাপে তাদের সমস্ত কথা জানবো এখন আমরা জানবো মুখটি যুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল তার বিস্তারিত।

মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল

আমরা এখন দেখবো মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল। মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কত নাম্বর সেক্টরে ছিলো তার তালিকা টেবিল আকারে তুলে ধরা হলো।
সেক্টর নং জেলা
চাঁদপুর
লক্ষ্মীপুর
মেহেরপুর / মুজিবনগর
পিরোজপুর
গাজীপুর
শরিয়তপুর
মাদারীপুর
১০ ফরিদপুর
১১ শেরপুর
১১ জামালপুর
৬ ও ৭ দিনাজপুর
রংপুর
সিরাজগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
হবিগঞ্জ
সুনামগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ
মানিকগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জ
গোপালগঞ্জ
কুমিল্লা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
পাবনা
বগুড়া
নওগাঁ
সাতক্ষীরা
চুয়াডাঙ্গা
কুষ্টিয়া
মাগুরা
খুলনা
ভোলা
বরগুনা
ঢাকা
১১ গাইবান্ধা
১১ নেত্রকোণা
জয়পুরহাট
বাগেরহাট
লালমনিরহাট
কক্সবাজার
মৌলভীবাজার
চট্টগ্রাম
১১ কুড়িগ্রাম
নোয়াখালী
পটুয়াখালী
নড়াইল
১১ টাঙ্গাইল
রাঙ্গামাটি
খাগড়াছড়ি
ঝালকাঠি
ফেনী
রাজশাহী
নরসিংদী
রাজবাড়ী
নীলফামারী
বান্দরবান
নাটোর
যশোর
ঝিনাইদহ
বরিশাল
সিলেট
পঞ্চগড়
ঠাকুরগাঁও
১১ ময়মনসিংহ
উপরের টেবিলটিতে প্রত্যেকটি জেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোন জেলা কত নম্বর সেক্টরে ছিল তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

১১ টি সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডার

নিচে ১১ টি সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডারের তালিকা তুলে ধরা হলো।
সেক্টর নং---সেক্টর/এলাকা--দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডো

সেক্টর ১--চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ফেনী নদী পর্যন্ত।--মেজর জিয়ার রহমান (এপ্রিল-জুন)/মেজর রফিকুল ইসলাম (জুন/ডিসেম্বর)

সেক্টর ২--নোয়াখালী, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব এবং ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার অংশ বিশেষ।-- মেজর কালেদ সোশাররফ ( এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) মেজর হায়দার(সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)

সেক্টর ৩--আখাউড়া ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলা, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ।-- মেজর শফিউল (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) মেজর নুরুজ্জামান ( সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)

সেক্টর 4-- সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই, শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইন থেকে পর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউডুকি সড়ক।-- মেজর সি আর দাও

সেক্টর ৫--সিলেট জেলায় পশ্চিম জেলা এবং সিলেট ডাইউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমানাবর্তী অঞ্চল-- মেজর মীর শওকত আলী

সেক্টর ৬-- ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর জেলা ও ঠাকুরগাঁও।--উইং কমান্ডর বাশার-- মেজর কাজী নুরুজ্জামান।

সেক্টর ৮-- সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অংশবিশেষ এবং দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলার এলাকা।--মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (অক্টোবর পর্যন্ত) মেজর এম. এ চৌধুরী (আগস্ট ডিসেম্বর)

সেক্টর ৯--সাতক্ষীরা দৌলতপুর সড়কসহ খুলনা জেলার সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চল এবং বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা।--আব্দুল জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর পর্যন্ত) এম.এ মঞ্জুর (অতিরিক্ত দায়িত্ব)

সেক্টর ১০--সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল চট্টগ্রাম ও চালনা--মুক্তি বাহিনীর ট্রেনিং প্রাপ্তর নৌ-কমান্ডারগণ

সেক্টর-১১--কিশোরগঞ্জ ব্যতীত সমগ্র ময়মনসিংহ জেলা-- মেজর আবু তাহের (এপ্রিলা-নভেম্বর) ফ্লাইট লেঃ এম হামিদুল্লাহ (৩ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পযন্ত)


আমরা উপর আলোচনা করলাম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের ১১টি সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডোর সম্পর্কে।

১১ টি সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ও সাব-সেক্টরসমূহ

আমাদের সবার ১১ টিসেক্টরের হেডকোয়ার্টার ও সাব-সেক্টরসমূহ সম্পর্কে জানা উচিত তাই নিম্নে এর তালিকা তুলে ধরা হলোঃ

নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ হরিনা, ত্রিপুরা ভারত।
১ নং সেক্টরঃ সাব-সেক্টরসমূহঃ ৫ টি ( ঋষিমুখ, শ্রীনগর, মনঘাট, তবলছড়ি এবং ডীমাগিরী)।

২নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ আগরতলা মেলাঘর, ত্রিপুরা, ভারত।
২নং সেক্টরঃ সাব-সেক্টরসমূহঃ ৬ টি ( গঙ্গাসাগর, আখাউড়া ও কসবা, মন্দবাগ,সালাদানদী, মালিগর, নির্ভয়পুর এবং রাজনগর)।

৩নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ হেজামারা, ত্রিপুরা, ভারত।
৩নং সেক্টরঃ সাব-সেক্টরসমূহঃ ১০ টি (আশ্রমবাড়ি, বাঘাইবাড়ি, হাতকাটা, সিমলা, পঞ্চবটি, মনতলা, বিজয়নগর, কলাছড়া, কল্কলিয়া এবং বামুটিয়া)

৪ নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ (প্রথম) করিমগঞ্জ (পরে) নাসিমপুর, আসাম, ভারত।
সাব-সেক্টরসমূহঃ ৬টি (জামালপুর, বড়পঞ্জী আমলাসিদ, কুুকতলা, কৈলাশহর এবং কমলাপুর)।

৫ নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ বাঁশতলা,ছাতক, সুনামগঞ্জ।
৫ নং সেক্টরঃ সাব-সেক্টরসমূহঃ ৬ টি( মুক্তাপুর, ডাউকি,শেলা, ভোলাগঞ্জ বালাট এবং বড়ছড়া)।

৬ নং নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ বুড়িমারী পাটগ্রামের নিকট। লালমনিরহাট, রংপুর।
৬নং সেক্টরঃ সেক্টরসমূহঃ ৫ টি (উজানপুর, পাটগ্রাম, সাহেবগঞ্জ, মোগলহাট এবং চিলাহাটি)।

৭ নং সেক্টরঃ হেড কোয়ার্টারঃ তরঙ্গপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
৭ নং সেক্টরঃ সাব-সেক্টরসমূহ ঃ ৮ টি ( মালন, তাপন, মেহেদীপুর, হমজাপুর, আংশিনাবাদ, ভোলহাট, ঠোকারাবাড়ি এবং লালগোলা)।

৮ নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ বেনাপোল ে(হেডকোয়ার্টার এর একটা বিরাট অংশ ছিল ভারতের কল্যাণী শহরের), ভারত।
৮ নং সেক্টরঃ সাব-সেক্টরসমূহঃ ৭টি ( বয়রা, হাকিমপুর, ভোমরা,লালবাজার, বানপুর, বেনাপোল এবং শিকারপুর)।

৯নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ টাকি, বশিরহাট, ভারত।
সাব-সেক্টরসমূহঃ ৭ টি ( টাকি, হিঙ্গলগঞ্জ ও শমসের নগর)।

১০ নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ নৌ কমান্ডার বাহিনী নিয়ে এই সেক্টর গঠিত হয়। এই সেক্টরে নিয়মিত কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না। কোন হেডকোয়ার্টার এবং সাব-সেক্টর ছিল না।

১১ নং সেক্টরঃ হেডকোয়ার্টারঃ প্রথমে লেলডালা পরে মহেন্দ্রগঞ্জ, আসাম, ভারত।
সাব-সেক্টরসমূহঃ ৮টি। মানকারচর, মহেন্দ্গঞ্জ, পুরা খাসিয়া, তালু,রংরা, শিববাড়ি, বাগমারা এবং মহেশখালি।


উপরে আমরা জানলাম ১১ টি সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ও সাব-সেক্টরসমূহ। এখন আমাদেরর সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর নাম জানা উচিত।

সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ নাম

আমাদের প্রত্যেকের উচিত সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম মনে রাখা। তাই নিছে তাদের তালিকা তুলে ধরা হলো।
  1. সিপাহী মোস্তফা কামাল
  2. লেন্স নায়ক মন্ত্রী আব্দুর রউফ
  3. টাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান
  4. লেন্স নায়ক নূর মোহাম্মদ শেখ
  5. সিপাহী হামিদুর রহমান
  6. স্কোয়াড্রনি লিডার রুহুল আমিন
  7. ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

লেখকের মন্তব্য -  মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিলো

আমরা এতক্ষণ যার নাম মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল। এবং হেডকোয়ার্টার সাব সেক্টর সমূহ ইত্যাদি অনেক তথ্য জেনেছি। এরকম যদি আপনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করবেন। কারণ নতুন নতুন তথ্য আমরা প্রতিদিন প্রকাশ করে থাকি। এ বিষয়ে যদি আপনার কোন মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন কারণ আমরা প্রত্যেকের কমেন্ট রিভিউ করি। আমাদের সঙ্গে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url