১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এর সকল তথ্য
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এ বিষয়ে হয়তো আপনারা জানতে চান কিন্তু এ বিষয়ে অন্য কোন ওয়েবসাইটে হয়তো সম্পূর্ণ তথ্য পাননি। আজকের এই নিবন্ধনটির মাধ্যমে আমি ১৯১৭ সালের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি এই নিবন্ধনটি মনোযোগ সহকারে পড়লে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমি বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি আপনারা ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করছেন বা এ বিষয়ে জানতে চান। এই কারণে আপনাদের কথা চিন্তা করেই আমি এই নিবন্ধনটি তৈরি করেছি।
সূচিপত্রঃ ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এর সকল তথ্য
ইভিভিটিভি
ভূমিকা
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে 1971 সালের 25 শে মার্চ বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম পর্ব হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের শাসকদের গড়ে বসে ছিল এ অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান কারণ। এ আন্দোলনের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
কিন্তু এই 1971 সালে অসহযোগ আন্দোলনের পেছনের রয়েছে বিভিন্ন কারণ। যে কারণ গুলো অনেকেই অবগত রয়েছেন আবার অনেকেই জানেন না। আর আপনাদের জানানোর জন্য ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এর সকল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের পিছনে যে কার্টুন গুলো ছিল সেই কারণগুলোর মধ্যে কিছু কারণ হলো ক্ষমতা হস্তান্তরের গড়িমসি, ছাত্র ও শ্রমিকদের কর্মসূচি এছাড়াও আরো অনেক কারণ ছিল চলুন আর দেরি না করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক সম্পর্কে।
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন
১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের রায়কে ঘিরে 1971 সালের 2 মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এই অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এ আন্দোলন ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ইয়াহিয়া সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত স্বশাসনের আন্দোলন।
আর পড়ুনঃ ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট
এক মার্চ হোটেল কোরবানির সামনে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টের সভার শেষে একজনকীর্ণ সংবাদিক সম্মেলনে পরবর্তীতে তিনিই মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষাকে এবং ১৫ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৫টি নির্দেশের মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনার প্রদান করেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ কর্তৃক বিভিন্ন নির্দেশের মধ্যে এ আন্দোলন পরিচালিত হয়।
1971 সালের ডিসেম্বর ও ৭১ এর জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট না করে তালবাহানা শুরু করেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টু ২ প্রদেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগের দাবি করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভুট্টোর এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এরূপ প্রস্তুতিতে ১৩ ই ফেব্রুয়ারি সরকারি এক ঘর্ষণায় ইয়াহিয়া খান ঢাকায় পরবর্তী তিন মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আহ্বান করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো জল ঘোলা করতে শুরু করেন। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দেন ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন না।
এদিকে জেনারেল ইয়াহিয়া খান লারাকা নাই গিয়ে ভোটের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। মূলত তারপর থেকেই শুরু হতে থাকে ষড়যন্ত্র। এবং বিভিন্ন পত্রিকার বিভিন্ন খবর মতে কেন্দ্রীয় সরকার ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখের পর থেকে আড়ালে বা গোপনে ঢাকায় বিভিন্ন সৈন্য পাঠাতে শুরু করে, কিন্তু এটি বেশ দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকে। তবে অনুমান করা যায় এটি একেই মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
সেখানে একটি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করার কথা ছিল পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রতিনিধিবৃন্দ। তাই জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিবৃন্দ ঢাকায় পৌঁছাতে শুরু করেন বা আসতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালের একে ই মার্চ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরিয়া খান ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়াই জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। এই ঘোষণাটি তিনি একটি বেতার ভাষণের মাধ্যমে প্রদান করেন।
যা সেদিন পুরো জাতিকে হতাশ নিমজ্জিত করে। এই অধিবেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানের দুই অংশ পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের শাসন ব্যবস্থায় নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অধিবেশনে স্থগিত হওয়ার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে খুব অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রাম পরিণত হয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়া খানের এই সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দেন। হোটেল পূর্বাণীতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বঙ্গবন্ধু এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মার্চ ঢাকায় এবং দিনে মার্চ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের হরতালের আহ্বান জানায়। তার এ সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তা স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। তারপর থেকে সমগ্র দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে।
অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
পতাকা উত্তোলন করে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ,স.ম আবদুর রব। তিন মার্চ লোটন ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান এবং সরকারি কাজে অবরোধ আরোপ করেন। তিনি সামরিক আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে র্যাপকে ফেরানো, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
সাথেই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এবং বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষনে বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” জনগণকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এ ভাষণের পর আন্দোলন আরতীপ্রও হয়ে ওঠে এবং দেশের প্রায় সব প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হতে থাকে।
মার্চ মাস জোরে নানা রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ও সহযোগ আন্দোলন একাত্মতা ঘোষণা করে। ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট” চালিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ শুরু করে। এরপর ২৬ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই অসহযোগ আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ ধাপ। যা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ রোপন করে।
লেখকের মন্তব্য
উপরক্ত লেখাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে অসহযোগ আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। এই লেখার মূল প্রতিপাদ্য হিসাবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বইটি থেকে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। বইটি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সমকাল রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের পাঠকদের কাছে একটি সমৃদ্ধ তথ্য ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে জিডি কপি ডাউনলোড করুন
প্রকাশনা গ্রন্থটিরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা প্রকাশনালী থেকে প্রকাশিত, যা গবেষকদের জন্য মূল্যবান দলিল। বইটির রচিতারা- মোঃ সানাউল্যাহ, ডঃ মোঃ মাসুদুর রহমান এবং আরো চারজন প্রবক্তা লেখক-তাদের গভীর গবেষণালব্ধ জ্ঞান কে অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার চেতনা ওভাবে ধরে রাখতে সহায়তা করেছে।
তথ্য উপস্থাপনার প্রয়োজনে কিছু কিছু স্থানে সদস্যপূর্ণ ভাষায় সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে তবে তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। নিবন্ধনটি ইত্যাদি আপনার ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবদের কাছে নিবন্ধন শেয়ার করবেন। যাতে করে তারাও এ বিষয়টি পড়ে এবং ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
এ বিষয়ে যদি কোন মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন আমরা প্রত্যেকের কমেন্ট রিভিউ করি। আশা করি এই নিবন্ধনটি পড়ার পর 1971 সালের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তবে ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের যে কথাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে এই কথাগুলো ব্যতীত আরও অনেক ইতিহাস থাকতে পারে। তবে সেগুলো আমার আজও অজানা এই কারণে সেই তথ্যগুলো প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url