বিড়ালের যত্নে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস

“বিড়াল” শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে বিড়াল প্রেমীদের আবেগ এবং ভালোবাসা। শৈশবের মধুময় স্মৃতিগুলো যখন মনে এসে কড়া নাড়ে তখন ভেসে আসে বিড়ালের সাথে কাটানো স্মৃতি। নিশ্চয়ই আপনারও একটি আদরের পোষা বিড়াল রয়েছে? বিড়াল ভীষণ আদর এবং যত্ন পছন্দ করে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার আদরের বিড়ালটির যত্ন কিভাবে নিবেন।
বিড়ালের যত্নে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস
evvtv

আপনার বিড়ালকে নিয়মিত গ্রুম করুন

আপনার আদরের বিড়ালটি আপনার পরিবারেরই একজন, তাই তার যত্ন নিতেও প্রয়োজন একটু বাড়তি মনোযোগ। আপনি যদি নতুন পেট লাভার হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো গ্রুম শব্দটির সাথে পরিচিত নন। 


বিড়ালের গ্রুমিং অর্থ হচ্ছে তাদের লোম ব্রাশ করে দেওয়া, লোমের গাঁট খুলে দেওয়া, গোসল করানো ইত্যাদি। আপনি হয়তো এখন ভাবছেন, বিড়াল তো খুবই পরিষ্কার প্রানী এরা নিজেরাই নিজেদের পরিষ্কার করে তাহলে গ্রুম করার প্রয়োজন কি? যদিও বিড়াল নিজেই নিজেকে পরিষ্কার করে তবুও আপনার বাড়তি যত্ন তাদের হাইজিন এবং সু-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। 


আপনার এই যত্ন কিটেন এবং বয়স্ক বিড়ালের জন্য খুবই দরকার। ছোট, মাঝারি কিংবা লম্বা লোম যাইহোক না কেনো সব ধরনের লোমের বিড়ালকেই নিয়মিত ব্রাশ করুন। বিড়ালের জন্য বিশেষ ধরনের ব্রাশ পাওয়া যায়, লোকাল ও অনলাইন পেট কেয়ার শপ গুলোতে। 


এতে বিড়ালের  মৃত লোম, লোমের ময়লা এবং গাঁট খুলে দিয়ে বিড়ালকে স্বাস্থ্যকর রাখে। এছাড়াও যেখানে সেখানে তাদের লোম পড়ে থাকার চান্সও কম থাকে।। ফলে বাসার হাইজিন মেইনটেইন করতে সুবিধা হবে। গ্রুম এর মধ্যে আরও রয়েছে:-


  • কটন বাড দিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কার করা।

  • নিয়মিত লোম ব্রাশ করা।

  • ক্যাট নেইল ক্লিপার দিয়ে নখ কেটে দিন।

  • ক্যাট টুথব্রাশ এবং ক্যাট টুথপেষ্ট দিয়ে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করে দিন।

  • সপ্তাহে অন্তত ১-২ দিন গোসল করান। প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন নেই কারণ তারা নিজেরাই পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে। 


পানি সরবরাহ করুন ২৪/৭

মানব দেহের জন্য যেমন শতকরা ৮০ শতাংশ পানি প্রয়োজন তেমন বিড়ালের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। সঠিক মাত্রায় হাইড্রেশন বিড়ালকে কম্ফোর্ট এবং হ্যাপি রাখে। এছাড়াও পানি বিড়ালের বিভিন্ন সমস্যা যেমন মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং কিডনির রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 


অনেক বিড়াল রয়েছে যারা পানির ব্যাপারে খুবই খুঁতখুঁতে স্বভাবের হয়ে থাকে। যদি আপনি কখনও দেখেন যে আপনার বিড়াল সিংক থেকে পানি চুমুক দিয়ে খাচ্ছে অথবা আপনি যে পাত্রে পানি দিয়েছেন সেই পাত্রটি থেকে পানি পা দিয়ে ফেলে দিয়ে খাচ্ছে তাহলে বুঝবেন যে বিড়ালটি প্রবাহিত পানি পান করতে পছন্দ করে। এটা ম্যাক্সিমাম বিড়ালদের নরমাল এবং ন্যাচারাল বিহেভিয়ার।


তাই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই বরং আপনার বিড়ালকে ফ্রেশ এবং প্রবাহিত হওয়া পানি খেতে দিন। আপনার বিড়াল যদি প্রবাহিত পানি পছন্দ করে তাহলে তার হাইড্রেশন নিশ্চিত করার জন্য পোষ্য ফাউন্টেনের মাধ্যমে তাকে পানি পান করান। 


হ্যান্ডলিং

আমরা অনেকেই জানি না বিড়ালকে কিভাবে ধরতে হয় বা কোলে নিতে হয়। আমরা বিড়ালের গলা ধরে কোলে তুলে নেই এতে বিড়াল প্যানিক হয়ে যেতে পারে। বিড়ালকে ধরার সময় আমরা এক হাত সামনের পায়ের পেছনে এবং অন্যটি পিছনের পায়ের অংশের নিচে রাখুন। কখনোই ঘাঁড় ধরে বিড়ালকে ওঠানো উচিৎ নয়। 


হাউজিং

বিড়াল পোষার কথা মাথায় আসলে সবার প্রথমে যে জিনিসটা নিশ্চিত করতে হবে তা হলো বিড়ালের থাকার যায়গা। বিড়াল যাতে কমফোর্টেবল ভাবে রেস্ট করতে পারে এমন হাউস চ্যুজ করুন। হাউজের ভেতর কম্বোল পেতে দিন। এছাড়াও টয় রাখতে পারেন এতে সে একটিভ থাকবে। 


আইডি ট্যাগ

অনেক সময় দেখা যায় বিড়াল বাসার বাইরে চলে যায়। বিড়াল কখনো হারিয়ে গেলেও আপনি যাতে তাকে খুঁজে পান এজন্য গলায় আইডি ট্যাগ ঝুলিয়ে দিন। 

বিড়ালের পটির জন্য লিটার বক্স 

বাসায় কি একের অধিক লিটার বক্স রাখা উচিৎ?  মেবি! সাধারণত আপনার বাসায় যতগুলো বিড়াল আছে তাদের সংখ্যার চেয়ে ১ টি লিটার বক্স বেশি রাখুন। যেমন আপনার বাসায় যদি ২টি বিড়াল থাকে তাহলে তাদের জন্য ৩ টি লিটার বক্স রাখুন। খেয়াল রাখবেন এমন যায়গায় লিটার বক্সটি রাখতে হবে যেন বিড়াল খুব ইজিলি যেতে পারে এবং প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারে। 


লিটার বক্সের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা 

বিড়াল ভীষণ পরিষ্কার প্রানী। এরা নিজেরা যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে তেমন লিটার বক্স ও পরিষ্কার থাকলে এরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অনেক সময় দেখবেন লিটার বক্স পরিষ্কার না পেলে এরা কার্পেট কিংবা বালিশের উপরই পটি করে দেয়। তাই নিয়মিত লিটার বক্স পরিষ্কার রাখুন এবং বিড়ালের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন। 



স্ক্র‍্যাচিং ট্রেইন

স্ক্র‍্যাচিং বিড়ালের একটি স্বাভাবিক এবং সহজাত প্রবৃত্তি। তবে যখন বাসায় আমরা ছোট বিড়াল লালন পালন করি তখন আমাদের নিজেদের উচিৎ তাকে স্ক্র‍্যাচিং শেখানো। এতে তার নখের নিচের মৃত কোষ দূর হয় এবং বিড়ালকে স্থুলতা থেকে রক্ষা করে। 


বিড়ালকে ক্যারিয়ারে রাখুন

বিড়াল নিয়ে আমাদের অনেকেরই বাইরে যেতে হয়, রাইট? এজন্য কারে কিংবা যেকোনো গাড়িতে বিড়ালকে সুন্দরভাবে রাখার জন্য কার ক্যাট ক্যারিয়ার খুবই প্রয়োজনীয়। 


হেলদি ডায়েট এবং ওয়েট

মানুষের মতো অন্যান্য পোষা প্রাণীদেরও একটা হেলদি ডায়েট চার্ট দরকার এবং সেই সাথে তারা যেন অতিরিক্ত ওয়েট গেইন করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনার বিড়ালটি যেন অতিরিক্ত ওয়েট গেইন করে স্থুলকায় না হয়ে পড়ে বিষয়টি আপনার লক্ষ্য রাখা উচিৎ। এজন্য বিড়ালদের স্ক্র‍্যাচিং ট্রেইন করান। পাশাপাশি বিড়ালের জন্য বিভিন্ন রকমের খেলনা পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়ে তাকে খেলতে দিন। খেলার মাধ্যমে তার শিখারি মনোভাবটা বজায় থাকে। 


বিড়ালের খাদ্যাভ্যাস 

বিড়ালের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। আপনি আপনার নিকটস্থ ভেটেরিনারির কাছ থেকে বিড়ালের ডায়েট চার্ট সংগ্রহ করতে পারেন। ভেটেরিনারি সব সময় বিড়ালকে ড্রাই ফুড খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। আপনার বিড়ালের জন্য ড্রাই ফুড (dry food, Pet care)  প্রোডাক্ট  কিনতে সহায়ক হিসেবে আরোগ্য আছে আপনার পাশে। 

স্পে এবং নিউটার 

বিড়ালের প্রজননজনিত রোগ অনেক গুরুতর সমস্যা হতে পারে, যা পুরুষ এবং মহিলা উভয় বিড়ালের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। স্পে করানো হলো মহিলা বিড়ালের জরায়ুর সংক্রমণ এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বিড়ালটিকে রক্ষা করা। এছাড়াও, এটি স্তনের টিউমারের ঝুঁকি হ্রাস করে। অন্যদিকে, পুরুষ বিড়ালের ক্ষেত্রে নিউটার করালে টেস্টিকুলার ক্যান্সার এবং কিছু প্রস্টেট সমস্যার ঝুঁকি কমে। নিউটার করানোর আরেকটি বড় উপকারিতা হলো, এটি পুরুষ বিড়ালের ঘোরাঘুরির ইচ্ছা কমিয়ে দেয়, যার ফলে তারা বাইরে হারিয়ে যাওয়া বা আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পায়। স্পে এবং নিউটার করার ফলে বিড়ালদের সংখ্যাও কমে যা পোষা ২-১ টা বিড়ালের সঠিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। আপনি আপনার বিড়ালের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভেটেরিনারির সাথে আলোচনা করতে পারেন। ভেটেরিনারি আপনাকে বিড়ালের প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি ভালোভাবে বোঝাতে এবং সঠিক পরামর্শ দিতে সক্ষম হবেন। এইভাবে আপনি আপনার বিড়ালটিকে আরও হেলদি, সেফ, একটিভ এবং হ্যাপি রাখতে পারবেন।


বিড়ালের টিকা

বিড়ালকে জলাতংক, প্যানলিউকোপিয়া, হের্পিস, ক্যালিসি, ফিলাইন নিউকোমিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া ও বোর্ডাটেলা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে টিকা প্রদান করতে হবে। তবে বাংলাদেশে বিড়াল খুব বেশি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় না। তবে আগে থেকেই সতর্ক থাকা ভালো। এজন্য বিড়ালকে নিয়ে নিকটস্থ ভেটেরিনারিতে যান। 



ওষুধ

বিড়ালের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ রয়েছে যা বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ থেকে বিড়ালকে রক্ষা করে। কিছু ওষুধের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:-



  • এন্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

  • এন্টিপ্যারাসিটিক যা কৃমি, ফ্লি এইসব পরজীবিদের নির্মূল করতে সাহায্য করে। 

  • ভ্যাকসিন জলাতঙ্ক, ফিলাইন লিউকোমিয়া এসব রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

  • এন্টিহিস্টামিন এলার্জি এবং চুলকানি হলে প্রয়োগ করতে হয়।

  • পেটের প্রদাহ বা ব্যাথা কমাতে এন্টি ইনফ্লেমেটরি ওষুধ দিতে হয়। 

  • হজমের সুরক্ষার জন্য প্রো-বায়োটিক খাওয়াতে পারেন। 

  • কোথাও কেটে গেলে অথবা সার্জারীর পরে পেইন রিলিভার খাওয়াতে হবে।

  • এন্টি মেট্রিক্স বমি বন্ধ করে।


এছাড়াও হার্ড ওয়ার্মসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এর জন্য ওষুধ দতে হবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url