বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আপনি কি বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চান বা বাজার অর্থনীতি কি এই বিষয়টি জানতে চান? আপনি যদি বাজারে অর্থনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান না তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাকে বাজার অর্থনীতির ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
আপনি নিচের এই বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন। তাই আপনি যদি বাজার অর্থনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
সূচিপত্রঃ বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
ইভিভিটিভি
ভূমিকা
আপনাদের পরীক্ষার খাতায় বিভিন্নভাবে প্রশ্ন আসতে পারে যেমন বাজার অর্থনীতির ধারণা দাও । বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। অথবা, বাজার অর্থনীতি কি? বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। অথবা, বাজার অর্থনীতি বলতে কি বোঝায়? বাজার অর্থনীতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো উল্লেখ কর। এরকম বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আপনার পরীক্ষার খাতায় প্রশ্ন আসতে পারে। তাই আপনি যদি সর্বোচ্চ মার্ক নিশ্চিত করতে চান তাহলে নিচের এই উত্তরটি ভালো করে পড়ুন।
আরো পড়ুুন: এড দেখে টাকা ইনকাম নগদে পেমেন্ট
বাজারে অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
উত্তর।। ভূমিকাঃ ক্রেতা ও উৎপাদকের ব্যক্তিগত স্বার্থ চিন্তা তথা লাভ লোকসানের চিন্তা থেকে যে প্রতিযোগিতামূলক ও মুক্ত অর্থ ব্যবস্থা চালু হয় এর নাম বাজার অর্থনীতি। বাজার অর্থনীতিতে সরকার কোনরূপ হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে না। ক্রেতা ও উৎপাদক বাজার অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
বাজার অর্থনীতির ধারণা: তারিখ নির্ভরশীলতা ও অবাধ বিনিময় সম্পর্কের উপর যে অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত তাকে বাজার অর্থনীতি বলে। বাজার অর্থনীতি এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সরকার হস্তক্ষেপ ছাড়া বিবেচনাধীন পন্য অথবা উপকরণের চাহিদা ও যোগান দ্বারা এদের মূল্য নির্ধারিত হয় এবং এর ভিত্তিতে পণ্য উপকরণের ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন হয়। দাম ব্যবস্থা দ্বারা বিনিময় সম্পর্ক প্রভাবিত হয়।
বিনিময় সম্পর্ক বলতে নিষেধ ব্যতিরেক ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে আদান-প্রদান কে বোঝায়। কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এমন মূল্য বা দাম ব্যবস্থা বাজার অর্থনীতির ভিত্তি। বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতি মূলত ব্যক্তিত্ববাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। সেখানে বলা হয় ব্যক্তির অর্থনৈতিক কাজকর্মে সরকার কোনরকম হস্তক্ষেপ করবে না। সেখানে অবাধ বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোগ ও উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে সমন্বয়ে ঘটবে।
বাস্তবে বিশুদ্ধ অর্থ বাজার বা মুক্ত অর্থনীতি নেই। কারণ, বর্তমানে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন, বন্টন এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার কোন না কোন ভাবে হস্তক্ষেপ করে। এমন বাজার অর্থনীতির ধারণা আপেক্ষিক অর্থে ব্যবহার করা উচিত। বাজার অর্থনীতির প্রাথমিক ধারণা আমরা অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) এর Wealth Of Nations গ্রন্থে Invisible Hand বক্তব্যের মাধ্যমে পাই। পরবর্তীকালে অধ্যাপক মার্শাল তার Principles of Economics গ্রন্থে পূর্ণ প্রতিযোগিতা ধারণার সাহায্যে অরোক্ষভাবে হলেও বাজার অর্থনীতির ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন।
বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য: বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতির সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা কঠিন। এইজন্য কতিপয় বৈশিষ্ট্যের আলোকে এরূপ অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভের চেষ্টা করা হয়। সাধারণভাবে বাজার অর্থনীতির যেসব বৈশিষ্ট্য আমাদের চোখে ধরা পড়ে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তিগত সম্পত্তি: বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক অপ্রতুল সম্পদ ব্যক্তিবর্গের মালিকানায় থাকে। সব ব্যক্তি বাজারের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকার কারণে ব্যক্তিবর্গ বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছামত সম্পদ অর্জন নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার ও বন্টন করতে পারে। তবে এই মালিকানা অবাধ নয়। কতিপয় নিয়ম নীতির অধীনে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বাজার অর্থনীতিতে স্বীকৃত। এক্ষেত্রে দেশীয় আইনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
২. ভোক্তার সার্বভৌমত্ব এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা: বলা হয়, “ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ভোক্তা সম্রাট”- এই উক্তির মাধ্যমে ভোক্তার সার্বভৌমত্বের প্রতিফলন ঘটে। ভোক্তা তার নিজস্ব পছন্দ অনুসারে ভোগ করে। এক্ষেত্রে সে নুনূতম বেশ সর্বাধিক তৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। ভোক্তার পছন্দ ও অরুচি অনুযায়ী কি দ্রব্য এখন এবং কি পরিমাণ উৎপাদন হবে তা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন শুরুর আগে উৎপাদক চিন্তা করে ভোক্তা কোন দ্রব্যটি বেশি পছন্দ করে।
ভোক্তার পছন্দই যেহেতু সর্বগ্রে বিভেদ্যতায় ভোক্তা কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বভৌম বলা হয়। পছন্দের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বলতে বুঝাই ব্যক্তি/ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পদ, মূলধন এবং অর্থ নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। যেমন: শ্রমিকরা তাদের পছন্দ অনুসারে নিয়োগ খুঁজতে পারে। এভাবে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছামত সম্পর্কে বিনিয়োগ করতে পারে। সুতরাং, বাজার অর্থনীতিতে ভোক্তা সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি।
৩. স্বীয় স্বর্থের ভূমিকা: বাজার অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যক্তিস্বতন্ত্রবাদ। কোন ব্যক্তির কর্মকাণ্ড তার নিজস্ব সার্থককে কেন্দ্র করে প্রচারিত হয়। প্রতিটি অর্থনৈতিক একককেই যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাহোক না কেন নিজের স্বার্থের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। আবার কোন ভোক্তা পণ্য ও সেবার ভোগ থেকে উপযোগ সর্বোচ্চকরণের চেষ্টা করে। এভাবে অর্থনীতির প্রতিটি এজেন্ট স্ব-স্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কর্মে লিপ্ত হয়।
৪. প্রতিযোগিতা: ব্যক্তিস্বার্থ এবং পছন্দের স্বাধীনতা। অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাবের কারণে প্রতিযোগিতার উদ্ভব হয়। বাজার অর্থনীতিতে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকার কারণে দ্রব্যের মোট চাহিদা বা যোগান কোন একজন ক্রেতা বা বিক্রেতার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
আবার দ্রব্য সম্পদ বাজারে অবাধ প্রবেশ ও নির্গমনের ব্যাপারে কোন প্রতিষ্ঠানিক বিধি-নিষেধ নেই। অর্থাৎ, পূর্ণ দ্রব্য উৎপাদনে ও স্বাভাবিক মুনাফা থাকলে যে কেউ পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে পারে। এর ফলে বাজার অর্থনীতি নমনীয় থাকে। ফলের বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন ও বন্টনের দক্ষতা বিদ্যমান থাকে।
৫. বাজারের দৃশ্য হাত: বাজার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ হয় বাজারের অদৃশ্য হাত দ্বারা। অদৃশ্য হাত ধারণাটি ব্যবহার করেন অ্যাডাম স্মিথ। এক্ষেত্রে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেস্ত্র নয়। নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি একটি অদৃশ্য হাতে নেস্ত। মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অর্থনৈতিক কাজকর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধা হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থের সাথে সামাজিক স্বার্থ ও রক্ষিত হয়। সে স্বয়ংক্রিয় উপায়ের মাঝে অদৃশ্য হাতের ছোঁয়া উপলব্ধি করা যায়।
ব্যক্তিস্বার্থের পরিণাম হলো পারস্পরিক প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতার পরিমাণ হল সাধ্যায়ত্ব দাম। সে দামের দাঁড়ায় সব রকম ভোগ দ্রব্যের উপাদান যোগান এবং চাহিদা পরিচালিত হয়। সুতরাং মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে ব্যক্তিস্বার্থের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ক্রিয়া কর্মের পরিচালনার পশ্চাতে কার্যকর তাহলে অদৃশ্য হাত।
৬. মূল প্রক্রিয়া: বাজার পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রব্য ও সম্পদের ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন সম্ভব। ক্রেতার সিদ্ধান্ত চাহিদা এবং বিক্রেতার সিদ্ধান্ত যোগান দ্বারা পরিচালিত হয়। পণ্য এবং উপকরণের চাহিদা ও যোগানের ঘাট প্রতিঘাতেই এদের বাজার দাম নির্ধারিত হয়। যে দ্রব্য/সম্পদের চাহিদা বেশি তার বাজার দাম বেশি হয় এবং যে দ্রব্য/সম্পদের চাহিদা কম তার বাজার দাম কম হয়। সুতরাং, মূল্য হচ্ছে দ্রব্য ও সম্পদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের মূল চালিকাশক্তি।
৭. সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস: বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতিতে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। বাস্তবে বর্তমান সময়ে এরূপ বাজার ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বাজার অর্থনীতি বলতে এমন অর্থনীতিকে বুঝায় যে ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রমের ন্যূনতম হলেও সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে।
উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, বাজার অর্থনীতি হচ্ছে একটি আদর্শ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ অর্জিত হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অসাধু আচরণের প্রেক্ষিতে বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতি পরিলক্ষিত হয় না। এক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তারপরও বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন সম্ভব হয় মুনাফার তাড়নায় এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে উন্নত কৌশলের উদ্ভাবন ঘটে।
লেখকের মন্তব্য
আমরা এতক্ষন আলোচনা করলাম বাজার অর্থনীতির ধারণা সম্পর্কে বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বা বাজার অর্থনীতি কি সেই সম্পর্কে। আপনি এটি যে কোন পরীক্ষায় লিখতে পারবেন গ বিভাগের জন্য। আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং বাজার অর্থনীতির সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। তবে এই বিষয় যদি আপনার কোন মতামত থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমরা প্রত্যেকের কমেন্টের রিভিউ করি।
আরো পড়ুন: রবিতে কিভাবে টাকা ধার নেয়
এরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। এই বাজার অর্থনীতির সম্পর্কে যদি আপনি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই বাজার অর্থনীতি সম্পর্কে আপনার ভালো লেগেছে তাই আপনি চাইলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে এটি শেয়ার করে রাখতে পারেন যাতে করে পরবর্তী সময়ে এ সম্পর্কে জানতে পারেন। অথবা আপনার বন্ধু-বান্ধবরা এই সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের সঙ্গে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url